Religion News

রাত্রের যে সময়ে সেহরি খেতেন মহানবী (সা.)

নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ঈমান ও সাওয়াবের আশায় রমজানের রোজা রাখে, আল্লাহ তার অতীতের সব গুনাহ মাফ করে দেন। ’ (বুখারি ও মুসলিম)

মহান আল্লাহ্‌ তাআলা বলেন, মানুষের প্রতিটি কাজ তার নিজের জন্য, কিন্তু রোজা কেবল আমারই জন্য, আমিই নিজেই এর প্রতিদান দেবো। পবিত্র রমজান মাসে আল্লাহর সন্তুষ্টির লক্ষ্যে রোজা রাখা মুসলমানদের উপর ফরজ।

সাদাসিধে ও সরল জীবনে অভ্যস্ত ছিলেন রাসুল (সা)। জীবনে সবকিছুতেই তিনি ছিলেন অনাড়ম্বর। সীমাহীন প্রাচুর্যের হাতছানি উপেক্ষা করে তিনি বেছে নিয়েছিলেন সাধারণ জীবন। খাবারের ব্যাপারেও ছিলো এ সারল্যের ছাপ।

মহানবী (সা.) বিলম্বে সেহরি করতে পছন্দ করতেন। তিনি আজানের আনুমানিক বিশ মিনিট পূর্ব পর্যন্ত সেহরি খেতেন।

হজরত জায়েদ ইবনে সাবেত (রা.) বর্ণনা করেন, আমরা রাসূল (সা.)-এর সঙ্গে ইফতার গ্রহণ করি। অতপর তিনি নামাজের জন্য দাঁড়ান। আমি (বর্ণনাকারী) বললাম, আজান ও সেহরির মাঝে কতটুকু সময়ের ব্যবধান ছিলো? তিনি বলেন, পঞ্চাশ আয়াত তথা পঞ্চাশ আয়াত তেলাওয়াত করতে যতটুকু সময়ের প্রয়োজন হয়। -সহিহ বোখারি: ১৯২১

হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) থেকে সেহরির পর বিশেষ কোনো দোয়ার বর্ণনা পাওয়া যায় না। তবে পুণ্যাত্মা বুজুর্গগণ সেহরি ও আজানের মধ্যবর্তী সময়ে আল্লাহর দরবারে প্রার্থনা করতেন।

কেননা হাদিসে এ সময়ে দোয়া কবুলের ঘোষণা এসেছে। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত। হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, আল্লাহতায়ালা প্রতি রাতের তৃতীয়ার্ধে পৃথিবীর আসমানে নেমে আসেন এবং বলেন, যে আমাকে ডাকবে আমি সাড়া দেব, যে আমার কাছে চাইবে আমি তাকে তা দেব এবং যে আমার কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা করবে আমি তাকে ক্ষমা করে দেব। ’ –সহিহ বোখারি: ১০৯৪

সাধারণ খাবারেই ছিলেন সন্তুষ্ট। হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, ‘মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত মুহাম্মদ (সা.)-এর পরিবার কখনও পরপর দু’দিন গমের রুটিতে তৃপ্ত হননি। ’ অথচ এ ব্যাপারে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর কোনো অভিযোগ ছিলো না। -সহিহ বোখারি: ৫৭১৬

রাসুল(সা.) এর খাবার গ্রহণের এ সারল্য ও অল্পতুষ্টি বজায় থাকতো রমজানের সেহরির সময়ও। তিনি সাধারণ খাবার দিয়ে সেহরি করতেন। ঘরে যখন যা থাকতো তাই সেহরি হিসেবে গ্রহণ করতেন।

তবে নবী জীবনীকারদের বিবরণ অনুযায়ী হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর খাদ্য তালিকায় সাধারণত গোশত, রুটি, জায়তুন (জলপাই বা তার তেল), খেজুর, দুধ ও মধু থাকত।

তৎকালীন সমাজের এ খাদ্যতালিকা থেকে যা সহজসাধ্য হতো হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) তাই খেতেন সেহরিতে।

সেহরির খাবার হিসেবে রাসূল (সা.)-এর বিশেষ কোনো পছন্দের কথা জানা যায় না। তবে হ্যাঁ, তিনি অন্য সব সময়ের মতো সেহরিতেও খেজুর পছন্দ করতেন। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘উত্তম সেহরি খেজুর এবং উত্তম তরকারি সিরকা। আল্লাহতায়ালা সেহরি গ্রহণকারীদের প্রতি দয়া করুন। ’ কানজুল উম্মাল: ২৩৯৮৩

অন্য হাদিসে হজরত রাসূল কারিম (সা.) সেহরির সঙ্গে সারিদের উল্লেখ করেছেন। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘সেহরি বরকতময়, সারিদ (গোশতের ঝোলে ভেজানো রুটি) বরকতময়, জামাতে নামাজ আদায় করা বরকতময়। ’ -কানজুল উম্মাল: ২৩৯৭৭

সেহরির খাবার যাই হোক না কেন নবী করিম (সা.) নিয়মিত সেহরি গ্রহণ করতেন এবং সাহাবিদেরও সেহরি গ্রহণের পরামর্শ দিতেন।

হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, তোমরা সেহরি গ্রহণ কর। কেননা সেহরিতে বরকত রয়েছে। ’ -সহিহ বোখারি: ১৯২৩

হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) খাবারের মান ও পরিমাণের দিকে না তাকিয়ে সেহরি গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন এবং সেহরিতে উম্মতের জন্য বরকতের দোয়া করেছেন।

হজরত আবু উমামা (রা.) থেকে বর্ণিত, (নবী করিম (সা.) বলেছেন) !হে আল্লাহ! আপনি আমার উম্মতের সেহরিতে বরকত দিন। (এর পর বলেন) তোমরা সেহরি গ্রহণ কর এক ঢোক পানি দিয়ে হলেও, একটি খেজুর দিয়ে হলেও, আঙুরের কিছু দানা দিয়ে হলেও। নিশ্চয়ই ফেরেশতাগণ তোমাদের জন্য শান্তির দোয়া করবে। -জামে সুয়ুতি: ৫০৭০

মুসলিমদের জন্য সেহরিতে খাবারে বিলাসী আয়োজন পরিহার করা উচিত। সেই সঙ্গে সেহরি ও আজানের মাঝে কিছু সময় দোয়া ও প্রার্থনার জন্য নির্ধারণ করি। আর রোজার মাস হলো তাহাজ্জুদে অভ্যস্ত হওয়ার উত্তম সময়।

পাঠকের মতামত:

Back to top button