টাকার লোভে প্রথম স্বামীকে ছেড়ে সাহেদকে বিয়ে করেন সাদিয়া
প্রথম স্বামী এক ব্যবসায়ী। সাদিয়া আবার বিয়ে করার পর প্রথম স্বামী গুলশানে প্রকাশ্যে সাহেদকে মারপিট করে রাস্তায় ফেলে চলে যায়। পরে তার বন্ধুরা তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বিটিভির সংবাদ পাঠিকা ছিলেন সাদিয়া আরাবী রিম্মি।
তার মা শাহিদা আরাবী বিটিভির প্রডিউসার। ২০০৭ সালে সাদিয়ার মায়ের কাছে বাবা মারা যাওয়ার গল্প বলে সিমপ্যাথি আদায় করে সাদিয়াকে বিয়ে করে সাহেদ। আর সাদিয়ার দিক থেকে ছিলো টাকার নেশা।
আগের ঘরে একটি সন্তানও আছে সাদিয়ার স্ত্রী সাদিয়া আরাবী রিম্মির সঙ্গে রিজেন্ট হাসপাতালের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাহেদ।[রাজধানীর বনানী ডিওএইচএসের ৪ নম্বর রোডের ৯ নম্বর বাসার নিচতলায় স্ত্রী সাদিয়া আরাবী রিম্মি ও দুই সন্তান নিয়ে বসবাস করতেন সাহেদ। ৩ হাজার ৬০০ বর্গফুটের ফ্ল্যাটের মাসিক ভাড়া ৯০ হাজার টাকা।
সাইরেন বাজানোর হুটার লাগানো গাড়িতে দেহরক্ষী নিয়ে চলতেন শাহেদের স্ত্রী। শাহেদের পাপের টাকায় তিনি বিলাসী জীবনযাপন করতেন। স্বামীর মতো তারও নেশা গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সঙ্গে ছবি তোলা। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গিয়ে মন্ত্রী-এমপিসহ ভিআইপিদের সঙ্গে ছবি তুলতেন। এসব ছবি বাঁধিয়ে রাখতেন বাসায়, প্রচার করতেন সামাজিক গণমাধ্যমে।
সাহেদের স্ত্রী সাদিয়া আরাবী রিম্মি বলেছেন, তার স্বামীর নামে সংবাদমাধ্যমে যেসব প্রচার হচ্ছে তার সবটা ঠিক নয়। তবে এসব খবরের ‘কিছু’ সত্যতা আছে বললেও সত্যগুলো কী কী, তা তিনি বলেননি।
সাহেদপত্নী সাদিয়াও বলছেন, পালিয়ে বাঁচতে পারবেন না তার স্বামী, ‘আত্মসমর্পণ করাই তার জন্য শ্রেয়’।
দৃশ্যত স্বামীর পক্ষ নিয়ে সাদিয়া শুক্রবার রাতে গণমাধ্যমকে বলেন, সংবাদমাধ্যমে যে সব প্রচারিত হচ্ছে তার সবটাই ঠিক নয়। কিছু সত্য আছে। বিভিন্ন মাধ্যমে তার যে হাজার হাজার কোটি টাকার কথা বলা হচ্ছে আমি স্ত্রী হিসাবে কিছুই জানি না।
তিনি বলেন, আমিও জানতে চাই তার কোথায় এত টাকা আছে। তদন্ত হোক, সবাই জানুক সত্য ঘটনা। যার দুইটা হাসপাতাল আছে তার তো কিছু টাকা থাকবে। যতটুকু জানি তিনি ‘ক্লিন বিজনেস’ করেন। ততটুকুই। তবে অন্যায় করে থাকলে তার পাশে নেই।
সাহেদের সঙ্গে তার সংসার জীবন ১৬ বছরের জানিয়ে সাদিয়া বলেন, টিভিতে টক শো, বিভিন্ন ব্যক্তির সাথে তার ছবি এসব মাত্র তিন-চার বছর হল। তার এসবের কারণে ভালোই মনে হত। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে মানুষের কাছে এতটা হেয় হতে হবে ভাবতে পারিনি। আমি এসব ঘটনায় খুবই লজ্জিত ও মর্মাহত।
পারিবারিক জীবনে তাদের মধ্যে তেমন কোনো ঝামেলা ছিল না জানিয়ে দুই কন্যা সন্তানের জননী সাদিয়া বলেন, সে পরিবারকে ঠিক মতো সময় দিত না সত্য। তবে সংসারে কোনো অশান্তি ছিল না। প্রায় প্রত্যেক পরিবারে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে একটু ঝামেলা থেকেই থাকে, এটা আমারও ছিল। তবে বলার মতো না।
সাদিয়া বলেন, গত ৬ জুন উত্তরায় রিজেন্ট হাসপাতালে র্যাবের অভিযানের পর সাহেদের সঙ্গে তার ‘শেষ কথা হয়েছিল’। সে শুধু বলেছে, রাতে ফেরা হবে না, যেখানে আছি ভালো আছি। এরপর তার সাথে আর কথা হয়নি। পরে তার লোকজনের মাধ্যমে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছি। সেই সব লোকজন প্রথম প্রথম ফোন ধরেছিলেন, এখন আর ধরেন না।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সাহেদ এখন কোথায় আছেন, তা তিনি ‘জানেন না’। তবে তাকে খুঁজতে বা অন্য কোনো কিছুর জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তার বাসায় আসেননি।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরুর পরপরই গত মার্চে রিজেন্ট হাসপাতালকে কোভিড-১৯ রোগীদের চিকিৎসার জন্য নির্দিষ্ট করেছিল সরকার। যদিও তাদের হাসপাতাল চালানোর অনুমতির মেয়াদ শেষ হয়ে গিয়েছিল আগেই।
সেখানে নমুনা পরীক্ষা না করে করোনাভাইরাসের ভুয়া রিপোর্ট দেওয়ার বেশ কিছু অভিযোগ পাওয়ার পর র্যাব খোঁজ নিয়ে জানতে পারে সরকারি প্রতিষ্ঠানের সিল ও প্যাড নকল করে সেসব রিপোর্ট তৈরি করা হলেও সেসব স্বাস্থ্যকেন্দ্র এসব নমুনা পরীক্ষা করেনি, রিপোর্টও দেয়নি।
ওই অভিযোগের ভিত্তিতে সোম, মঙ্গল ও বুধবার রিজেন্ট হাসপাতালের উত্তরা ও মিরপুর শাখা এবং রিজেন্ট গ্রুপের প্রধান কার্যালয়ে অভিযান চালায় র্যাব। অভিযানে বেশ কিছু অনুমোদনহীন টেস্ট কিট এবং করোনাভাইরাসের ভুয়া রিপোর্ট পাওয়ার কথা জানানো হয় র্যাবের পক্ষ থেকে।
অভিযানের প্রথম দুই দিনে উত্তরা থেকে মোট আটজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে মঙ্গলবার রাতে রিজেন্ট হাসপাতালের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও প্রতারণার অভিযোগ ১৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয় রাজধানীর উত্তরা পশ্চিম থানায়।