National News

জেকেজি’র সাবরিনাকে চাকরিচ্যুত করেছিলেন স্বামী আরিফ!

করেছিলেন স্বামী আরিফ – করোনাভাইরাস পরীক্ষার নমুনা সংগ্রহ ও ভুয়া ফলাফল দেয়ার ঘটনায় সাবরিনার সম্পৃক্ততার কথা জিজ্ঞাসাবাদে তার স্বামী আরিফুল হক চৌধুরী জানিয়েছেন বলে দাবি পুলিশের। বলা হচ্ছে, গ্রেপ্তার প্রত্যেকেই জেকেজির সাথে সাবরিনার সম্পৃক্ততার কথা বলেছে।

ঢাকা মহানগর পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের সহকারী কমিশনার মো. মাহমুদ খান বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে আরিফ এ–ও দাবি করেন, করোনার নমুনা পরীক্ষার জালিয়াতির ঘটনায় তিনি সাবরিনাসহ চারজনকে চাকরিচ্যুত করেন। তবে একজন সিইও হয়ে প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যানকে চাকরিচ্যুত করতে পারেন কি না, সে ব্যাপারে জানতে চাইলে আরিফ কোনো উত্তর দিতে পারেননি। কাউকে চাকরিচ্যুতির কাগজপত্রও দেখাতে পারেননি।

তিনি বলেন, ‘ওভাল গ্রুপের সিইও আরিফুল চৌধুরীকে জিজ্ঞাসাবাদের সময় আমাদের জানান, করোনার নমুনা পরীক্ষার জালিয়াতির সঙ্গে তাদের অফিসের কিছু লোক জড়িত ছিল। যখন তিনি এই বিষয়টি জানতে পারেন, তখন তিনি তাদের টার্মিনেট করেন।

মাহমুদ খান বলেন, আমি আরিফ চৌধুরীর কাছে জানতে চাইলাম, আপনি কাকে কাকে টার্মিনেট করেছেন। জবাবে আরিফ বলেন, আমার ওয়াইফ (সাবরিনা আরিফ চৌধুরী), যিনি চেয়ারম্যান ছিলেন, তাকে আমি টার্মিনেট করেছি। আমি তখন বললাম, আপনি (আরিফুল) যদি সিইও হন, তাহলে কীভাবে আপনার ওয়াইফকে (স্ত্রী) টার্মিনেট করবেন। সিইও চেয়ারম্যানকে টার্মিনেট করতে পারেন কি না।’

সাবরিনা আরিফ চৌধুরী সম্পর্কে পুলিশ কর্মকর্তা মাহমুদ খান বলেন, চিকিৎসক সাবরিনা বারবারই অস্বীকার করে বলেছেন, তিনি করোনার নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষার ফলাফল জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত নন। কিন্তু আরিফুল চৌধুরীসহ অন্যরা জানিয়েছেন, জেকেজির সবকিছু ভালোভাবে জানতেন চিকিৎসক সাবরিনা আরিফ চৌধুরী।

তিনি বলার চেষ্টা করছেন, তিনি জেকেজির চেয়ারম্যান নন। কিন্তু তিনিই যে জেকেজির মুখপাত্র, সেটি সবাই জানেন। তিনি নিজে ফেসবুক ও ইউটিউবে প্রচারণা চালিয়েছেন। কথা বলেছেন। আর তিনি যে জেকেজি থেকে বেরিয়ে গেছেন, এমন কোনো পদত্যাগপত্র তো তিনি জমা দেননি। ওভাল গ্রুপ ও জেকেজি হেলথ কেয়ার কোম্পানির কাগজপত্র জব্দের চেষ্টা করা হচ্ছে।

প্রসঙ্গত, রোববার গ্রেপ্তার হয়েছেন ডা. সাবরিনা আরিফ। আজ পুলিশ তার রিমান্ড আবেদন করবে। এর আগে গত ২৩ জুন করোনার মনগড়া সনদ দেয়া, জালিয়াতি ও প্রতারণার অভিযোগে তেজগাঁও থানা পুলিশ জেকেজি হেলথ কেয়ারের প্রধান নির্বাহী (সিইও) আরিফুল চৌধুরীসহ ৬ জনকে গ্রেপ্তার করে। এরপর সেদিনই সন্ধ্যায় থানা-হাজতে থাকা অবস্থায় আরিফুলের ক্যাডার বাহিনী ভাঙচুর ও হামলা করে থানায়। মারধর করে পুলিশকেও।

এছাড়া রাজধানীর মহাখালীর তিতুমীর কলেজে নমুনা সংগ্রহের বুথ বসিয়ে সেখানে প্রশিক্ষণের নামে শুরু করেন নানা অনৈতিক কর্মকাণ্ড। কলেজের কক্ষে কক্ষে নারী-পুরুষের আপত্তিকর অবস্থানসহ নানা অনৈতিক কাজে বাধা দিলে তিতুমীর কলেজের শিক্ষক, কর্মচারী ও ছাত্রদের ওপরও হামলা করে আরিফুলের ক্যাডার বাহিনী। মূলত ওই মামলার অনুসন্ধান করতে গিয়েই বেরিয়ে আসে আরিফুলের নানা অপকর্মের কাহিনী।

জানা যায়, আরিফ রিজেন্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাহেদের মতো বিশিষ্ট ব্যক্তিদের নাম ভাঙিয়ে বিভিন্ন জনকে হুমকি দিতেন। এমনকি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নাম ব্যবহার করে স্বাস্থ্য অধিপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালককেও দেখে নেয়ার হুমকি দেন আরিফুল। তার সার্বিক কাজে সহোযোগিতা করতেন তার চতুর্থ স্ত্রী ডা. সাবরিনা।

জেকেজির বিরুদ্ধে প্রতারণা, জালিয়াতি, সরকারি কাজে বাধা, পুলিশের ওপর হামলাসহ নানা অভিযোগে চারটি মামলা করেছে পুলিশ।

থানা ও থানার বাইরে হামলা চালানোর ঘটনায় ১৮ জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা করা হয়েছে। এর বাইরে বিভিন্ন সময়ে জেকেজি যেসব জিনিসপত্র ভাড়া বা ব্যবহারের জন্য এনে ফেরত দেয়নি তার জন্য একটি মামলা করা হয়েছে।

বাকি দুটি প্রতারণার মামলা করা হয়। ডা. সাবরিনাকে প্রতারণা মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়। তার স্বামীকেও একই মামলায় গ্রেপ্তার দেখায় পুলিশ।

সাবরিনাকে গ্রেপ্তারের আগে পুলিশের পক্ষ থেকেও বলা হচ্ছে জেকেজির প্রতারণা থেকে সাবরিনার দায় এড়ানোর সুযোগ নেই। কারণ তার স্বামী আরিফ চৌধুরি জিজ্ঞাসাবাদে প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সাবরিনার সক্রিয় সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করেছেন।

গতকাল রোববার তেজগাঁও বিভাগের উপ-কমিশনার হারুন অর রশিদ সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, আদালতে আগামীকাল সোমবার সাবরিনাকে নেয়া হবে। পুলিশ রিমান্ড আবেদন করবে। জিজ্ঞাসাবাদের পর এই ঘটনায় আর কে কে জড়িত রয়েছেন সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানা সম্ভব হবে।

হারুন অর রশিদ বলেন, এর আগে করোনাভাইরাস পরীক্ষার নামে জালিয়াতির অভিযোগে জেকেজির যেসব সদস্য গ্রেপ্তার হয়েছেন তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তাদের সবাই বলেছেন সাবরিনাই জেকেজির চেয়ারম্যান। তাছাড়া তেজগাঁও কলেজে জেকেজির বুথে হামলার অভিযোগ উঠলে সাবরিনাই প্রতিষ্ঠানটির মুখপাত্র হিসেবে সংবাদমাধ্যমে বক্তব্য দেন। অভিযানের একদিন আগে তিনি নিজে প্রতিষ্ঠান থেকে সরে যান। সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে তিনি কখনই কোনো প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যানের দায়িত্বপালন করতে পারেন না।

নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষা নিয়ে যে ঘটনা ঘটেছে সাবরিনা তার দায় এড়াতে পারেন না বলেও মন্তব্য করেন হারুন অর রশিদ। এতদিন পরে গ্রেপ্তার করা কেন হলো জানতে চাইলে বলেন, তদন্ত কর্মকর্তা তার সম্পর্কে খোঁজখবর নিয়েছেন।

পাঠকের মতামত:

Back to top button