National News

স্ত্রী’কে জড়িয়ে ধরে কাঁদছিলেন স্বামী, তখন ‘উল্লাস’ করছিল এমসি ক্যাম্পাস ধ.র্ষকরা

কাঁদছিলেন স্বামী – অন্ধকারে গাড়ির ভেতরেই পালাক্রমে ধ’র্ষণ করা হয় এক গৃহবধূকে। এ সময় বেঁধে রাখা হয় তার স্বামীকে। নিজেকে রক্ষা করতে ‘বাঁ’চাও, বাঁ’চাও’ বলে চি’ৎকার করছিল গৃহবধূ। স্বামীও চি’ৎকার করছিলেন। এ সময় উল্লাস করছিল ছাত্রলীগ কর্মীরা। চি’ৎকারের আওয়াজ রোধ করতে তারাও করে চি’ৎকার। চি’ৎকার শুনলেও হোস্টেলে থাকা শিক্ষার্থীরা কেউ এগিয়ে আসেনি। তবে- তারা ফোন করে ঘটনা জানায় শাহপরান থা’না পু’লিশকে।

পু’লিশ আসতে আসতেই সংঘবদ্ধধ’র্ষণ শিকার হয় ওই বধূ। রাত ৯টার দিকে যখন পু’লিশ এমসি কলেজের হোস্টেলে পৌঁছায় ততক্ষণে ধ’র্ষকরা সট’কে পড়ে। হোস্টেলের সামনে দাঁড়িয়ে অঝোরে কাঁদছিলেন স্বামী-স্ত্রী’। গণধ’র্ষণের কারণে স্ত্রী’ শারীরিকভাবে অ’সুস্থ হয়ে পড়েন।

স্ত্রী’কে জড়িয়ে ধরে স্বামী কাঁদছিলেন। পু’লিশকে দেখেই হাউমাউ করে কেঁদে উঠেন স্বামী-স্ত্রী’ দু’জনই। এরপর পু’লিশ তাদের হাসপাতা’লে পাঠানোর ব্যবস্থা করে। প্রত্যক্ষদশীরা মানবজমিনের কাছে এভাবেই ঘটনার বর্ণনা দেন। এমসি কলেজের শতবর্ষী ছাত্রাবাস। কয়েক বছর আগে ওই ছাত্রাবাস আ’গুনে পুড়িয়ে দেয়া হয়েছিল। এরপর সরকারের তরফ থেকে উপহারস্বরূপ দেয়া হয়েছিল নতুন এই ছাত্রাবাস। এটির অবস্থান ছাত্রাবাসের একেবারে পেছনে। নির্জন টিলাময় ভূমি।

টিলার পাদদেশেই নির্মাণ করা হয়েছে চার তলা ভবন। সন্ধ্যা নামলেই নির্জন হয়ে পড়ে ওই হোস্টেল এলাকা। আলো নেই আশেপাশেও। ফলে অন্ধকারে নিমজ্জিত থাকে এলাকা। আর এই হোস্টেলের সামনেই এমসি কলেজে ক’লঙ্কময় ইতিহাস রচিত হলো। এমন ঘটনা কখনোই এমসি কলেজে ঘটেনি। পাহাড়, টিলার আবরণে বেষ্টিত এমসির ক্যাম্পাস। সেই বৃটিশ আমলের কলেজ। অনেক স্মৃ’তি এই কলেজের। এ কারণে বিকাল হলেই ক্যাম্পাসে ঘুরতে যান অনেকেই। এর মধ্যে বেশিরভাগই যান প্রাক্তন শিক্ষার্থী। ক্যাম্পাসে ঘুরে স্মৃ’তি রোমন্থন করেন তারা। ওই স্বামী-স্ত্রী’ও ক্যাম্পাস দেখতে গিয়েছিল।

ফেরার পথে ধ’র্ষণের শিকার হন গৃহবধূ। মা’র্চ থেকেই বন্ধ এমসি কলেজ। সব হোস্টেলই বন্ধ। এরপরও সরব ছিল এমসির ছাত্রাবাস। এই সরবের পেছনের কারণও ভিন্ন। ছাত্রাবাস বন্ধ করা হলেও ছাত্রলীগ হোস্টেল ছাড়েনি। ছাত্রাবাসের নিয়ন্ত্রক ছিল ছাত্রলীগ নেতা সাইফুর ও রনি। দুই জনই ছাত্রলীগের টিলাগড়ের রঞ্জিত গ্রুপের কর্মী। রঞ্জিত সরকারের বলয়ের হওয়ার কারণে তারা হোস্টেলে ছিল বেপরোয়া। কলেজ কর্তৃপক্ষ হোস্টেল বন্ধ করলেও তারা হোস্টেলের বিভিন্ন রুম দখল করে রেখেছে। বসবাস করতো হোস্টেলে। খাওয়া-দাওয়া সব করতো ওখানেই। তাদের ভ’য়ে কেউ কোনো কথা বলতো না।

ছাত্রাবাসের দারোয়ানরা তাদের ভ’য়ে থাকতো তটস্থ। ঘটনার পর থেকে তারা আরো ভড়কে গেছে। একজন দারোয়ান জানালেন- ছাত্রাবাসে সাইফুর ও রনির আধিপত্য ছিল একতরফা। তারা সব অ’পকর্মের কেন্দ্রে পরিণত করেছিল হোস্টেলকে। সন্ধ্যা নামলেই চলে আসতো বহিরাগতরা। তারা সবাই গিয়ে একত্রিত হতো নতুন ভবনের ২০৫ নম্বর কক্ষে। কখনো কখনো তারা হোস্টেলের বাইরের নির্জন জায়গায় অবস্থান নিতো। মধ্যরাত পর্যন্ত চলতো তাদের আড্ডা-মস্তি। এসব সবাই দেখলেও কেউ কোনো কথা বলতো না।

কথা বললেই করা হতো মা’রধর। এ কারণে নিরবে সব সহ্য করে চলছিল সবাই। সাইফুর, রনি ছাড়াও রবিউল, অর্জুন, তারেকুল, মাসুমও ছিল আড্ডার মধ্যমনি। মধ্যরাত পর্যন্ত আড্ডা দিয়ে তারা হলের বিভিন্ন কক্ষেই ঘুমিয়ে পড়তো। বিসিএস পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে কয়েকজন শিক্ষার্থী লুকিয়ে হোস্টেলে অবস্থান করছিল। ঘটনার সময় তারাও ছিলেন নতুন বিল্ডিংয়ে। দোতলা ও তিনতলায় অবস্থান করছিল তারা। ওখান থেকে এক মহিলার চি’ৎকার শুনলেও কেউ বাইরে এসে প্রতিবাদ করার সাহস পাননি। এছাড়া হোস্টেলের সিড়িতেও তাদের লোক দাঁড়িয়ে ছিল।

গতকাল দুপুরে তারা মানবজমিনকে জানান- ঘটনার সময় তারা চি’ৎকার শুনেছেন। এক মহিলা ও এক পুরুষ সম্ভ্রম রক্ষার জন্য সাহায্য চেয়েছিল। কিন্তু প্রা’ণভ’য়ে তারা কেউ বের হননি। ঘটনার পরপর তারাও হোস্টেল ছেড়ে চলে যান। গতকাল দুপুরে এসে তাদের বইপত্র নিয়ে গেছেন। নতুন হোস্টেলটি চারতলা। এই চারতলার মধ্যে ৩ তলা পুরোটারই কাজ শেষ। এ কারণে ওখানে ছাত্রদের জন্য ছেড়ে দেয়া হয়েছে। হোস্টেলের এক শিক্ষার্থী জানান- নতুন হোস্টেলে দুইতলা ও তিনতলায় ৯৬ জন শিক্ষার্থী বসবাস করেন।

কলেজ বন্ধ হওয়ার পর সবাই বাড়িতে চলে গেছেন। বিসিএস পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য কয়েকজন ছিলেন। এর বাইরে ছাত্রলীগের রনি ও সাইফুরের নেতৃত্বে একটি গ্রুপ সবসময় হোস্টেলে অবস্থান করতো। তারা হোস্টেলকে মা’দকের আখড়ায় পরিণত করেছে। এর মধ্যে রনির পুরো নাম শাহ মাহবুবুর রহমান রনি। সে এখন আর এমসি কলেজের ছাত্র না। মাস্টার্স পাস করেছে গত বছর। এরপরও সে এমসি কলেজের নতুন বিল্ডিংয়ের ২০৫ নম্বর কক্ষটি দখলে রেখেছে। তার কক্ষে বসেই মা’দকের আসর বসাতো বহিরাগত ছাত্রলীগ কর্মীরা। করো’নাকালে মহিলাদেরও যাতায়াত করতে দেখেছেন অন্য ছাত্ররা। কিন্তু কেউ কোনো প্রতিবাদ করেননি। রনির কক্ষে শনিবার ভোররাতে অ’ভিযান চালিয়েছে পু’লিশ। ওই কক্ষ থেকে দেশীয় অ’স্ত্র উ’দ্ধার করা হয়েছে। পুরাতন ছাত্রাবাসের ৪ নম্বর ব্লকে একটি শিক্ষক বাংলো ছিল। ওই বাংলো এখন ছাত্রলীগ কর্মী সাইফুর রহমানের দখলে। সে শিক্ষক বাংলোতে বসবাস করতো।

ছাত্রাবাসে সবাই তাকে ভ’য় পায়। ভ’য়ঙ্কর সাইফুর নামে চিনেন সবাই। বেপরোয়া জীবনযাপন তার। যখন যা ইচ্ছা তাই করে। শিক্ষক বাংলো দখলে রাখলেও শিক্ষকরা এর প্রতিবাদ করতেন না। সাইফুর ইয়াবাসহ নানা নে’শায় আসক্ত বলে হোস্টেলে বসবাসরত শিক্ষার্থীরা জানিয়েছে। সাইফুর অনার্স পাস করেছে এমসি কলেজ থেকেই। শুক্রবার রাতে ধ’র্ষণের ঘটনাটি তারই নেতৃত্বে ঘটেছে বলে পু’লিশ জানিয়েছে। প্রথমে জো’রপূর্বক ওই বধূকে সাইফুরই ধ’র্ষণ করে বলে জানা গেছে। গতকাল ভোররাতে সাইফুরের কক্ষ থেকে পু’লিশ অ’বৈধ আগেয়াস্ত্র পেয়েছে। ধ’র্ষক মাহফুজুর রহমান মাহফুজও এমসি কলেজের শিক্ষার্থী। সে হোস্টেলে থাকতো। রবিউল আগে শিক্ষার্থী ছিল। এখন সে হল দখল করে আছে।

অর্জুন ও তারেক বহিরাগত। আ’সামিদের মধ্যে সাইফুরের বাড়ি বালাগঞ্জে, রবিউলের দিরাই, মাছুমের কানাইঘাট, অর্জুনের জকিগঞ্জ, রনির হবিগঞ্জ এবং তারেকের বাড়ি সুনামগঞ্জে। এমসি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর সালেহ উদ্দিন আহম’দ মানবজমিনকে জানিয়েছেন- হোস্টেল থেকে ওদের বার বার তাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। কিন্তু ওরা বারণ মানেনি। সবার অগোচরে এসে আবার হোস্টেলেই বসবাস শুরু করে। তিনি জানান- ‘ধ’র্ষণের ঘটনার পর আম’রা এখন ওই হোস্টেলটিকে সিলগালা করে দেবো।

কাউকে সেখানে বসবাস করতে কিংবা ঢুকতে দেয়া হবে না।’ সিলেট মহানগর পু’লিশের এডিসি (মিডিয়া) জ্যোতির্ময় সরকার জানিয়েছেন- ‘ঘটনার সময় ধ’র্ষিত ও তার স্বামী সাহায্যের জন্য চি’ৎকার করছিল। হোস্টেল থেকেই পু’লিশকে ফোন করা হয়। খবর পেয়ে পু’লিশ গিয়ে তাদের উ’দ্ধার করে।’ সূত্র : মানবজমিন

পাঠকের মতামত:

Back to top button