Miscellaneous News

এসআই কে স্যার ডেকেও জীবন ভিক্ষা পাননি মেজর সিনহা!

সেনাবাহি’নীর (অব.) মেজর সিনহা মোহা’ম্মদ রাশেদ খান (৩৬)। তিনজনের একটি দল প্রায় একমাস আগে ‘জাস্ট গো’ নামের একটি ডকুমেন্টারি ফ্লিম করার জন্য কক্সবাজারের হিমছড়ির একটি কটেজে উঠেছিলেন। এরই প্রেক্ষিতে ৩১ জুলাই বৃহস্পতিবার বিকেলে মাথাভাঙ্গা ও মারিশবনিয়া একটি পাহাড়ে ওই ফ্লিমের কাজ করেন।

ফেরার সময় কক্সবাজার টেকনাফ মেরিনড্রাইভের শামলাপুর ত’ল্লাশি চৌকিতে পু’লিশের নির্মম গু’লিতে প্রাণ হারান। এ ঘ’টনায় রাষ্ট্রীয়ভাবে ত’দন্ত চলছে। পাশাপাশি বাহারছড়া ইউনিয়নে পরিস্থিতি থমথমে বিরাজ করছে। খোঁজখবর নিয়ে জানা গেছে, সেনাবাহিনী থেকে ২০১৮ সালে সেচ্ছায় অবসর নেন মেজর সিনহা রাশেদ খান।

প্রায় এক মাস আগে তার একটি দল ‘জাস্ট গো’নামের একটি ফ্লিমের শুটিং করার জন্য কক্সবাজারের হিমছড়িতে এসে একটি হোটেলে দুই কক্ষ ভাড়া নিয়ে থাকতেন। ওই দিন বিকেলে বাহারছড়া ইউনিয়নের মাথাভাঙ্গা থেকে শহিদুল নামের এক কিশোরকে নিয়ে পাহাড়ে উঠেন।

তার সঙ্গে ছিলেন শিক্ষার্থী শিফাত। কিশোরটি তাদের পথ দেখিয়ে ফিরে আসলে তারা লাইটের আলো জ্বালিয়ে কাজ করেন। এতে স্থানীয় অনেকেই অপরিচিত লোকজন দেখে কৌতূহল ও নানা রকম ধারণা করতে থাকেন। সন্ধ্যা শেষে রাতের শুরুতে গন্থব্যস্থলে ফেরার জন্য রওনা করেন।

প্রথমে কক্সবাজার টেকনাফ সড়কের ২ বিজিবির চেকপোস্ট পরে বাহারছড়া পু’লিশের ত’দন্ত কেন্দ্রের তল্লাশি চৌকিতে পৌঁছলেই উভয়ের মধ্যে কথা কা’টাকা’টির একপর্যায়ে কেন্দ্রের ইনচার্জের গু’লিতে ঢলে পড়েন ওই সাবেক মেজর। এ সময় তার সঙ্গে থাকা সঙ্গীয় সিফাতকে আ’টক করে ত’দন্ত কেন্দ্রে নেয়া হয়।

জানা যায়, নি’হত সেনা কর্মক’র্তা সিনহা মোহা’ম্মদ রাশেদ খান যশোরের ১৩ বীর হেমায়েত সড়কের সেনানিবাস এলাকার মৃ’ত এরশাদ খানের ছেলে।
ঘ’টনাটি ত’দন্তের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তিন সদস্যের একটি ত’দন্ত কমিটি গঠন করা হলেও পরে সংশোধন করে চার সদস্যদের একটি শক্তিশালী কমিটি গঠন করা হয়।

অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (চট্টগ্রাম) ও যুগ্ম সচিব মিজানুর রহমানকে আহ্বায়ক করে । কক্সবাজারের অতিরিক্ত জে’লা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ শাজাহান আলী সদস্য অতিরিক্ত পু’লিশ সুপার ও রামু ১০ পদাতিক ডিভিশনের জিওসির একজন প্রতিনিধি সহকারে এ কমিটি গঠন করা হয়েছে।

পাশাপাশি তিন আগস্ট দুপুরে চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি খন্দকার গোলাম ফারুকের নেতৃত্বে এক দল পু’লিশ বাহারছড়া ত’দন্ত কেন্দ্রে তদন্তে যান। তার আগে এ ঘটনায় ওই কেন্দ্রের ইনচার্জ লিয়াকত হোসেনসহ পু’লিশের ২০ সদস্যকে প্রত্যাহার করে পু’লিশ লাইনে নিয়ে যাওয়া হয়।

এদিকে মেরিন ড্রাইভ সড়কে একজন অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মক’র্তা নি’হতের ঘ’টনা নিয়ে পরস্পর বিরোধী বক্তব্য রয়েছে। এমনকি পু’লিশ যদিওবা দাবি করেছে দু’র্ধর্ষ রোহিঙ্গা ডা’কাত বা’হিনীর সদস্য পাহাড় থেকে নেমে আসার খবর পেয়েই বাহারছড়া পু’লিশ ফাঁড়ির দায়িত্বরত পরিদর্শক লিয়াকতের নেতৃত্বে একদল পু’লিশ মেরিন ড্রাইভে অবস্থান নিয়েছিল।

লোকজনের দেয়া খবর অনুযায়ী টেকনাফ থেকে কক্সবাজারমুখী একটি প্রাইভেটকারের আরোহীর সঙ্গে কথা কা’টাকা’টির এক পর্যায়ে বাহারছড়া ফাঁড়ির দায়িত্বরত পু’লিশ ইন্সপেক্টর লিয়াকত গু’লি চালায়। পু’লিশের দাবি ওই সেনা কর্মক’র্তা নিজের পি’স্তল বের করেছিলেন পু’লিশের প্রতি।

ঘ’টনার পর পরই কক্সবাজার জে’লা সদর হাসপাতালে নেয়ার পর চিকিৎসকরা গু’লিবিদ্ধ আরোহী মেজর (অব.) সিনহা মোহা’ম্মদ রাশেদকে মৃ’ত ঘোষণা করেন। পরে ত’ল্লাশি চালিয়ে ৫০ পিস ইয়াবা ও গাঁজা পাওয়া যায়। এ ব্যাপারে টেকনাফ থা’নায় দুটি মা’মলা দা’য়ের করা হয়েছে। গেল শনিবার দুপুরে তার ময়নাত’দন্ত শেষে স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

অপরদিকে চাঞ্চল্যকর এ হ’ত্যাকাণ্ডের ঘ’টনার পর শনিবার বিকেলে মেরিন ড্রাইভ রোডের বাহারছড়া পু’লিশ ফাঁড়ি এলাকার ঘ’টনাস্থলে সেনাবা’হিনীর একটি ত’দন্ত দল ঘটনা ত’দন্তে যায়। এসময় এলাকার লোকজন সেনাবা’হিনীর ত’দন্ত দলটিকে দেখে এগিয়ে আসেন। লোকজনের কাছে ত’দন্ত দলের কর্মক’র্তারা শুক্রবার রাতের ঘ’টনার বিষয়ে জানতে চাইলে পু’লিশের বক্তব্যের সম্পূর্ণ বিপরীত চিত্র ফুটে উঠে।

ত’দন্তের সময় উপস্থিত একজন প্রত্যক্ষদর্শী জানিয়েছেন, স্থানীয় একটি হেফজখানার মুয়াজ্জিন মো. আমিনসহ বেশ কয়েকজন সেনা কর্মক’র্তাদের কাছে বলেছেন, শনিবার রাতে প্রাইভেটকার থেকে যে ব্যক্তিকে গু’লি করে হ’ত্যা করেছে সেটা ছিল একটি নির্মম ঘ’টনা। তারা জানান, প্রাইভেটকারের ওই আরোহী (মেজর সিনহা) ফাঁড়ির পু’লিশ ইন্সপেক্টর লিয়াকতের নির্দেশ মতে উপরে দুই হাত তুলে বলেন- ‘বাবা আপনারা অহেতুক আমাকে নিয়ে উ’ত্তেজিত হবেন না।

আপনারা আমাকে নিয়ে একটু খোঁজ নিন। মেজর সিনহা এমন কথা বলার সঙ্গে সঙ্গেই কুত্তার বাচ্চা বলেই তাঁর (মেজর সিনহা) বুকে গু’লি চালায় পু’লিশ ইন্সপেক্টর লিয়াকত হোসেন। তখনই মেজর বলেছিলেন স্যার আমাকে জীবনটা ভিক্ষা দেন। পর পর আরও দুটো গু’লি করলে তৎক্ষণাৎ তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন।

ত’দন্তের পর থেকে বায়তুন নুর জামে ম’সজিদের মেয়াজ্জিনকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না বলে ম’সজিদের একাধিক মুসল্লি ও পরিচালকরা জানান। পাশাপাপাশি ভ’য়ে অনেকেই এলাকা ছেড়ে গা ঢাকা দিয়েছে। কেউ কেউ মুখ ব’ন্ধ করে রেখেছে। হু’মকি প্রদান করায় ভ’য়ে এখন কেউ মুখ খুলছে না। বর্তমানে পরিস্থিতি থমথমে বিরাজ করছে।

কক্সবাজারের পু’লিশ জানিয়েছেন, ঈদের সময় দেশে জ’ঙ্গি হা’মলা হতে পারে মর্মে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং পু’লিশ সদর দপ্তরের স’তর্ক বার্তা রয়েছে। এ নিয়ে বাড়তি স’তর্কতায় রয়েছে জে’লা পু’লিশ। বিশেষ করে উখিয়া-টেকনাফে রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এলাকা হওয়ায় এক প্রকার রেড এলার্টে রয়েছে শৃঙ্খলা বা’হিনীর সদস্যরা।

এমনই সময়ে শুক্রবার রাতে শাপলাপুরের একটি পাহাড় থেকে নেমে আসা বোরকা সদৃশ বস্তু পরিহিত লোকজনের খবর শুনে পু’লিশ হয়তবা ডা’কাত নতুবা জ’ঙ্গি সন্দেহ করে ওই গাড়িটিকে টার্গেট করে আসছিল। পরে খোঁজ নিয়ে জানা যায় যে, নি’হত ব্যক্তি সেনাবাহি’নীর একজন অবসরপ্রাপ্ত মেজর। তিনি কক্সবাজারের হিমছড়ি মেরিন ড্রাইভের একটি হোটেলের দুটি কক্ষ ভাড়া নিয়ে থাকতেন।

প্রত্যক্ষদর্শী শামসুল ই’সলাম বলেন, মাথাভাঙ্গার প্রধান সড়কের একটি সরু গলির পশ্চিম দিকে কিছুদূর যাওয়ার শামসুল ইস’লামের কিশোর নাতি শহিদুল ইস’লামকে সঙ্গে করে নেন মেজর ও তার সঙ্গে থাকা সিফাত। পাহাড়ি পথ দেখিয়ে দিয়ে ফিরে আসে বলে জানান শামসুল ইস’লাম।

তিনি আরও জানান, পাহাড়ে উঠে বেশ কিছুক্ষণ কাজ করেছিল। রাত হলে নেমে আসেন তারা। তবে এর মধ্যে মারিশবিনয়া এলাকার লোকজন হট্টগোল করেছিল বলেন শুনেছি। এর বেশি বিস্তারিত তিনি জানাতে পারেননি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় একজন বলেন, আমি বাড়ি যাবার সময় দেখলাম, বাহারছড়া কেন্দ্রের ইনচার্জ একটি কারকে থামান।

গাড়িতে থাকা একজন বলেন, কেউ ইনফরমেশ দিলে গাড়ি চেক করেন। এতে লিয়াকত হোসেন তাদের দিকে পি’স্তল তাক করে বলেন, শ্যালা ভু’য়া কোথাকার নাম। কারের আসনে থাকা মেজর সিনহা হাত দুটো ওপরে তুলে গাড়ি থেকে নেমে পড়েন। কিছু বলার আগে গু’লি করেন।

তারপরেও মেজর বলেন, স্যার আমাকে জীবনটা ভিক্ষা দেন। ত’দন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ নির্মমভাবে পর পর আরও দুটি গু’লি করেন। কিছুক্ষণ পরে টেকনাফ থা’নার ওসি ঘ’টনাস্থলে আসেন।

মোঃ ফরিদ স্থানীয় মেম্বার জানান, বিকেলে দুইজন লোক মেরিনড্রাইভে কারটি রেখে ভেতরে আসেন। গ্রামের এক কিশোরকে নিয়ে পাহাড়ে উঠে যান। পাহাড়ে তারা আলো জালিয়ে কাজ করায় গ্রামের লোকজন ডা’কাত মনে হট্টগোল করেন ও মাকে জানিয়ে দেন। খবরটি তারা (মেজর সিনহা ও সিফাত) পেয়ে দ্রুত নেমেই ফের কার যোগে ফিরে যান।

কিছুক্ষণ পরে শুনতে পায়, ওখানে গু’লিতে নিহত হন। শুধু বাহারছড়া ইউনিয়ন নয়, পুরো দেশ বিষয়টি নিয়ে ক্ষু’ব্দ। সব পেশাজীবী শ্রেণি সুষ্ঠু ত’দন্ত করে সংশ্লিষ্ট সবার দৃষ্টামূলক শা’স্তির দাবি জানান।

পাঠকের মতামত:

Back to top button