Entertainment News

কৌতুক অভিনয়ের ম্যাজিশিয়ান দিলদার

লাখো দর্শকের হৃদয়ে বেঁচে থাকা অভিনেতা দিলদারের মৃত্যুবার্ষিকী’ ১৩ জুলাই । ২০০৩ সালের ১৩ জুলাই তারিখে মারা যান অসম্ভব জনপ্রিয় এই কমেডিয়ান। দিলদারের জনপ্রিয়তা এতটাই তুঙ্গে ছিল যে, তাকে নায়ক করে নির্মাণ করা হয়েছিল ‘আব্দুল্লাহ’ নামে একটি চলচ্চিত্র।

তিনি ছিলেন সিনেমার দুঃখ ভোলানো মানুষ। ছবি দেখতে দেখতে কষ্ট-বেদনায় মন যখন আচ্ছন্ন হয়ে থাকতো, তখনই তিনি হাজির হতেন হাসির সুবাতাস বইয়ে দিয়ে। দর্শকরা তাকে দেখতে হলে আসতেন। তিনি তাই ঢাকাই সিনেমার সুপারস্টার হয়ে উঠেছিলেন। বলছি নন্দিত কৌতুক অভিনেতা দিলদারের কথা।

আজ ১৩ জুলাই দিলদারের মৃত্যুবার্ষিকী। ২০০৩ সালের এই দিনে ৫৮ বছর বয়সে তিনি জীবনের মায়া কাটিয়ে চিরদিনের মতো পৃথিবী ত্যাগ করেন। দেখতে দেখতে কেটে গেল ১৭টি বছর, দিলদার নেই। তবে তিনি থেকে গেছেন অসংখ্য চলচ্চিত্রে তার দুর্দান্ত অভিনয়ে; কৌতুক অভিনয়ের কিংবদন্তি হয়ে।

১৯৪৫ সালের ১৩ জানুয়ারি চাঁদপুরে জন্মগ্রহণ করেন দিলদার। তিনি এসএসসি পাস করার পর পড়াশোনার ইতি টানেন। ১৯৭২ সালে ‘কেন এমন হয়’ নামের চলচ্চিত্র দিয়ে অভিনয় জীবন শুরু করেন। আর পেছনে ফিরে তাকাননি তিনি। অভিনয় করেছেন ‘বেদের মেয়ে জোসনা’ ‘বিক্ষোভ’, ‘অন্তরে অন্তরে’, ‘কন্যাদান’, ‘চাওয়া থেকে পাওয়া’, ‘সুন্দর আলীর জীবন সংসার’, ‘স্বপ্নের নায়ক’, ‘আনন্দ অশ্রু’, ‘শান্ত কেন মাস্তান’-সহ অসংখ্য জনপ্রিয় সব চলচ্চিত্রে।

দিলদারের জনপ্রিয়তা এতটাই তুঙ্গে ছিল যে, তাকে নায়ক করে নির্মাণ করা হয়েছিল ‘আব্দুল্লাহ’ নামে একটি চলচ্চিত্র। নূতনের বিপরীতে এই ছবিতে বাজিমাত করেছিলেন তিনি।

কী’ করে বলব তোমায় আমি ভালোবাসি – আব্দুল্লাহ ছবির দিলদারের ঠোঁটেই সুবীর নন্দী গান দর্শক পর্দায় উপভোগ করেন।অসংখ্য জনপ্রিয় সব চলচ্চিত্র দিলদারের কৌতুক অভিনয়ে সমৃদ্ধ হয়েছে। ২০০৩ সালে ‘তুমি শুধু আমা’র’ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য সেরা কমেডি অভিনেতার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান দিলদার।

দিলদারকে বাংলা সিনেমার দর্শকরা এখনও অনুভব করেন। দর্শকরা দিলদারকে নিয়ে আফসোস করেন। তার মতো কেউ আর আসেননি। দর্শকদের হাসির ফেরিওয়ালা। ডায়লগ এবং এক্সপ্রেশনের মাধ্যমে দর্শককে এক ধরনের নির্মল আনন্দদানে ছিলেন সিদ্ধহস্ত।

সিনেমাতে দর্শক তার অভিনয় দেখে যেমন মুগ্ধ হয়েছেন, তেমনি চরিত্রের বৈচিত্রও দেখিয়েছেন অভিনেতা দিলদার। ১৯৭২ সালে ‘কেন এমন হয়’ ছবিতে অভিনয় দিয়ে অভিনেতা দিলদার চলচ্চিত্র জগতে প্রবেশ করেন দিলদার। দিলদারের যথাযথ মূল্যায়ন হয়নি। ইন্ডাস্ট্রিতে উনি অবদান রেখে গেছেন।

অবদান মানেই শুধু চলচ্চিত্র প্রযোজনা নয়। দিলদার বাংলা সিনেমাকে অভিনয় দিয়ে সমৃদ্ধ করে গেছেন। পাঁচ শতাধিক চলচ্চিত্রে তিনি কাজ করেছেন দিলদার। অথচ দিলদারের পরিবারের খোঁজ নেন না চলচ্চিত্রের কোন মানুষ। জন্মদিন ও মৃত্যু দিবস কোন প্রকার স্মরণ ছাড়াই চলে যায়।

নায়ক রিয়াজ দিলদারের ছোট মেয়ে জিনিয়া আফরোজ কে বেশ কয়েক বছর অাগে একবার জবের ব্যবস্থা করে দিয়েছিল। যাই হোক, ভালো অাছে দিলদারের পরিবার।

তার চলে যাওয়ার পর থেকে ঢাকাই ছবি থেকে যেন প্রাণ হারিয়েছে কমেডি। দিলদারের মৃত্যুর পর ঢাকাই সিনেমাতে যে শূণ্যতা সৃষ্টি হয় তা এখন পর্যন্ত পূরণ হয়নি।

তার মৃত্যুর পর আরও অনেক কৌতুক অভিনেতাই এসেছেন, আবার সময়ের স্রোতে হারিয়েও গেছেন। কিন্তু কেউই দিলদারের অভাব পূরণ করতে পারেননি।

তার হাঁটা-চলা, বাচনভঙ্গি, অভিনয়ের সাবলীলতার পরতে পরতে থাকতো আনন্দের ছড়াছড়ি। তাই দুঃখ-সংগ্রাম পেরিয়ে শেষ দৃশ্যে দিলদারের সংলাপ দিয়েই সিনেমার শেষ হওয়াটা স্বাভাবিক ব্যাপারে পরিণত হয়েছিল। আশি-নব্বই দশকের চলচ্চিত্রে তিনি আর কৌতুক হয়ে উঠেছিল দুইটি সমার্থক শব্দ।

অদেখা ভুবনে ভালো থাকুন। আনন্দে থাকুন হাসির জাদুকর দিলদার।

পাঠকের মতামত:

Back to top button