National News

রিমান্ডে সাবরিনা, বেরিয়ে এলো চাঞ্চল্যকর তথ্য

করোনার ভুয়া টেস্টের অভিযোগে গ্রেপ্তার জেকেজি হেলথকেয়ারের চেয়ারম্যান ও জাতীয় হৃদেরাগ ইনস্টিটিউটের চিকিৎসক ডা. সাবরিনা চৌধুরীকে রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। এই জিজ্ঞাসাবাদে চাঞ্চল্যকর সব তথ্য বেরিয়ে আসছে বলে জানা গেছে।

পুলিশ জানিয়েছে, জেকেজির কোনো ট্রেড লাইসেন্স নেই। এর পরও কিভাবে প্রতিষ্ঠানটি করোনা নমুনা সংগ্রহের অনুমতি পেল তার তদন্ত চলছে। সাবরিনার মোবাইল ফোন চেক করে সাতটি মেসেজ পাওয়া গেছে। প্রতিটি মেসেজে সাবরিনা বিভিন্ন মানুষকে ফোন করে কখনো জেকেজির চেয়ারম্যান, কখনো সমন্বয়ক আবার কখনো আহ্বায়ক পরিচয় দিয়ে প্রতারণা করেছেন। তাকে সহযোগিতাকারী অনেক প্রভাবশালীর নাম জানা গেছে।

সাবরিনাকে জিজ্ঞাসাবাদকারী ঢাকা মহানগর পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) হারুন অর রশিদ জানিয়েছেন, সাবরিনার মোবাইল ফোন চেক করে করেছে পুলিশ। সেখানে প্রায় প্রতিটি মেসেজের শুরুতেই সাবরিনা নিজেকে জেকেজির চেয়ারম্যান দাবি করেছেন। এর মধ্যে একটি মেসেজ এরকম-

‘সুমন আমি জেকেজির চেয়ারম্যান ডা. সাবরিনা বলছি। তুমি খুব কিউট। আমার প্রতিনিধি পাঠাচ্ছি। করোনা নমুনা সংগ্রহ করতে সব ধরনের সহযোগিতা কর।’

হারুন অর রশিদ গণমাধ্যমকে বলেছেন, তিন দিনের রিমান্ডে নিয়ে সাবরিনাকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করা হয়েছে। এরই মধ্যে তিনি কিভাবে প্রতারণার ফাঁদ পেতে করোনা নমুনা পরীক্ষা ছাড়াই ভুয়া সনদ দিতেন সে বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন।

প্রসঙ্গত যে, অতি সম্প্রতি জেকেজির ব্যাপারে পুলিশ বিশদ তদন্ত শুরু করে। এতে উঠে আসে ডা. সাবরিনা ও তার প্রতারক স্বামী আরিফ চৌধুরীর নাম। এরপর গত রবিবার ডা. সাবরিনাকে হৃদেরাগ হাসপাতাল থেকে পুলিশের কার্যালয়ে ডেকে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের পর তেজগাঁও থানার এক মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।

ডা. সাবরিনাকে গতকাল সোমবার সকালে ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করে চার দিনের রিমান্ডের আবেদন করে পুলিশ। শুনানি শেষে ঢাকা মহানগর হাকিম শাহিনুর রহমান তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
জেকেজি হেলথকেয়ারের চেয়ারম্যান ডা. সাবরিনা চৌধুরীর বিরুদ্ধে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের দেড় হাজারের বেশি ভুয়া রিপোর্ট প্রদানের মাধ্যমে আট কোটি টাকা আত্মসাতসহ বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। অন্যদিকে সাহেদের বিষয়ে অনুসন্ধানে নামতে চায় দুদক।

সংস্থাটি জানায়, ডা. সাবরিনা চৌধুরী জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে কর্মরত (সরকারি চাকরি) থাকাকালে তার স্বামী আরিফ চৌধুরীর সহায়তায় প্রতারণা ও জালিয়াতির মাধ্যমে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে করোনা রোগীদের নমুনা সংগ্রহপূর্বক ১৫ হাজার ৪৬০টি ভুয়া মেডিকেল রিপোর্ট প্রস্তুত ও সরবরাহ করে ৮ কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়াসহ জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করেছে বলে জেনেছেন তারা।

অন্যদিকে, রিজেন্ট হাসপাতালের মালিক ও রিজেন্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান মো. সাহেদ করিমের অনিয়ম-দুর্নীতি ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুদক। কমিশনের বিশেষ তদন্ত অনুবিভাগ এই অভিযোগটি অনুসন্ধান করবে বলে নিশ্চিত করেছেন দুদকের পরিচালক (জনসংযোগ) প্রনব কুমার ভট্টাচার্য্য।

এদিকে র‍্যাব সূত্রে জানা যায়, করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে চিকিৎসার নামে প্রতারণা এবং জালিয়াতির মাধ্যমে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন সাহেদ। অবশ্য  তাকে গ্রেপ্তার করা হলে অবৈধ সম্পদ অর্জনের মোট পরিমাণটা জানা যেত।

তবে সাহেদের অনিয়ম-দুর্নীতির প্রমাণ পেয়ে এরই মধ্যে রিজেন্ট গ্রুপের দুইটি হাসপাতাল বন্ধ করে দিয়েছে র‌্যাব। এই ঘটনায় সাহেদসহ ১৭ জনকে আসামি করে একটি মামলাও হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এখন তাকে খুঁজছে।

দুদক আরও জানায়, সাহেদ মাইক্রোক্রেডিট ও এমএলএম ব্যবসার নামে জনসাধারণের সাথে প্রতারণা করে কোটি কোটি টাকা সংগ্রহ, বিভিন্ন ধরনের জাল-জালিয়াতি ও প্রতারণার মাধ্যমে পরস্পর যোগসাজশে সরকারি অর্থ আত্মসাৎ, আয়কর ফাঁকি, ভুয়া নাম ও পরিচয়ে ব্যাংক ঋণ গ্রহণ করে কোটি কোটি টাকা আত্মসাত করে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ পেয়েছে দুদক।

ইতোমধ্যে কমিশনের সংশ্লিষ্ট অনুবিভাগ বিভিন্ন ব্যক্তি, গণমাধ্যম, ভার্চ্যুয়াল মাধ্যমসহ বিভিন্ন উৎস থেকে মো. সাহেদ করিমের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগগুলো সংগ্রহ করে।

এসব তথ্য-উপাত্ত সংবলিত অভিযোগ দুদকের দৈনিক ও সাম্প্রতিক অভিযোগ সেল কমিশনে উপস্থাপন করলে কমিশন অভিযোগ অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন।

এদিকে অভিযোগ অনুসন্ধানে দুদকের উপপরিচালক মো. আবু বকর সিদ্দিক প্রধান করে তিন সদস্যেরে একটি অনুসন্ধান দল গঠন করা হয়েছে।

পাঠকের মতামত:

Back to top button